যখনই আমাদের সামনে “আর্কিটেকচার” বা “স্থাপত্যবিদ্যা” কথাটি আসে সাথে সাথে ‘সৃজনশীলতা’এবং ‘নান্দনিকতা’ এই দুটি শব্দ ও চলে আসে। মানুষ নিজের সৃষ্টিশীলতার বিকাশ ঘটিয়ে আবাসস্থল, অফিস-আদালত,হাসপাতাল, বিদ্যালয় থেকে শুরু করে সবকিছুরই সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে চায়। আর একজন আর্কিটেক্ট এর কাজ হল স্থাপনার ভিতরে এবং বাহিরে যথাযথ প্ল্যানিং বা পরিকল্পনা করা। এমনকি স্থাপনার ভিতরের ও বাহিরের দেয়ালের রং, আসবাবপত্রের সঠিক বিন্যাস, স্পেস এর সঠিক ব্যবহার একজন আর্কিটেক্ট যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করে থাকেন।
বর্তমান যুগে আধুনিকতার উৎকর্ষ সাধনের সাথে সাথে আর্কিটেকচার টেকনোলজিতে পড়াশোনা করা ব্যক্তিদের কর্মক্ষেত্র বেড়েছে।
একজন আর্কিটেক্ট কে স্থাপত্যের পরিকল্পনা ছাড়াও আরো বিশেষ কয়েকটি ভাগ নিয়ে কাজ করতে হয়।যেমন- আরবান প্ল্যানিং, ল্যান্ডস্কেপ ডিজাইন, ইন্টেরিয়র ডিজাইন ইত্যাদি।
আজকে আমরা আর্কিটেকচার এর মেজর একটা পার্ট “আরবান প্ল্যানিং” সম্বন্ধে জানব….
আরবান প্ল্যানিং কী:
আরবান প্ল্যানিং মানে হচ্ছে নগর পরিকল্পনা। যে কোনো নগরের জন্য বায়ু, পানি, নগরের অবকাঠামো,পরিবহন ব্যবস্থা ইত্যাদির সামগ্রিক পরিকল্পনা করাকেই আরবান প্ল্যানিং বা নগর পরিকল্পনা বলা হয়।
নগর পরিকল্পনার মাধ্যমে মানব বসতির সঠিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা হয়। নগরের সম্পদ (যেমন পানি, গ্যাস) কীভাবে মানুষের কাছে পৌছে দেয়া হবে, অবকাঠামোগত বিন্যাস ও স্থানভেদে ভূমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতিকরণ ইত্যাদি বিষয় নগর পরিকল্পনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়। নগর পরিকল্পনার অন্যতম বিষয় নগরের কোন অংশবিশেষের নকশা প্রণয়ন করা।
আরবান প্ল্যানার বা নগর পরিকল্পনাবিদের কাজ:
নগর পরিকল্পনাবিদগণ সামগ্রিক ভাবে একটি নগরের ডিজাইন শুরু করার সময় আধুনিক সমাজে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং টেকসই উন্নয়নের মত বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে শুরু করেছে।
এমতাবস্থায় নগর পরিকল্পনাবিদগন স্থায়িত্ব, বিদ্যমান এবং সম্ভাব্য দূষণ, সম্ভাব্য যানজট সহ পরিবহন, অপরাধ, জমির মূল্য, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সহ বিস্তারিত বিষয় বিবেচনায় রেখে কাজ করে থাকেন।
তাছাড়াও নগরের সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়নে নগর পরিকল্পনাবিদগণ কাজ করে থাকেন।
অনেক সময় দেখা যায় যে কোন একটা দেশের নির্দিষ্ট নগরে একটা বিশেষ সুবিধা কে কেন্দ্র করে ঘনবসতি বা স্থাপনা তৈরি হতেই থাকে। এর ফলে জনসংখ্যার অসম বিন্যাস পরিলক্ষিত হয়।এমতাবস্থায় একজন নগর পরিকল্পনাবিদ যদি স্থাপনাগুলো ডিসেন্ট্রালাইজড করেন তাহলে কিন্তু সমস্যাগুলো অনেকাংশে কমানো সম্ভব। একজন নগর পরিকল্পনাবিদ নগরের উন্নয়নের জন্য সবসময়ই এ ধরনের কাজগুলো করে থাকেন।
চাকরিক্ষেত্র: বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন রিয়েল এস্টেট কোম্পানি,এনজিও, কনস্ট্রাকশন কোম্পানি ও কনসালটেন্সি ফার্মে স্বীকৃত নগর পরিকল্পনাবিদ বা আরবান প্ল্যানার থাকাটা বাধ্যতামূলক।
তাছাড়াও সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে –
*গণপূর্ত অধিদপ্তর
*স্থাপত্য অধিদপ্তর
*রাজউক
*কেডিএ
*সিডিএ
*আরডিএ
*বিডিএ
*এলজিইডি, সকল সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, পরিকল্পনা কমিশনে নগর পরিকল্পনাবিদ গুরুত্বপূর্ণ পদে সুযোগ পেয়ে থাকেন।
বর্তমানে UNDP, UNICEF, UNESCO এর অধিনে পরিচালিত বিভিন্ন প্রজেক্টে নগর পরিকল্পনাবিদদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
লেখক
লিমা আক্তার
জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর
আর্কিটেকচার টেকনোলজি
ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট