ফ্লোর বা মেঝে-25

ফ্লোর বা মেঝে

ঘরের যে অংশে মানুষ বসবাস করে অর্থাৎ ঘরের মধ্যে থাকার জন্য, জিনিসপত্র রাখার জন্য, প্রয়োজনীয় ব্যবহারযোগ্য পায়ের নিচের জায়গাকেই মেঝে বলে। বর্তমানে দালানে অনেকগুলো মেঝে থাকে। ভূমিতলে অবস্থিত ভূমির উপর অর্থাৎ প্লিন্থ লেভেলে যে মেঝে নির্মাণ করা হয়, তাকে এক তলার মেঝে বা গ্রাউন্ড ফ্লোর বলে। এর প্রতি উপরের তলার মেঝে নিচের তলার ছাদ হিসাবে কাজ করে। যেমন-এক তলার ছাদ দু’তলার মেঝে,দু’তলার ছাদ তিন তলার মেঝে ইত্যাদি। দালানের সর্বোচ্চ তলার মেঝের উপরে যে ছাদ থাকে তাকে দালানের ছাদ বলে।

টেরাজো ফ্লোরিং: সাধারণ পাথরের পরিবর্তে যদি মার্বেল পাথরের ছোট ছোট দানা দিয়ে মেঝের গাত্র করা হয়, তখন সেই কৃত্রিম পাথরের মেঝেকে টেরাজো ফ্লোরিং বলে। এ ধরনের মেঝে দেখতে সুন্দর এবং ঘর্ষণজনিত ক্ষয় প্রতিরোধী বলে বর্তমানে এর ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। আবাসিক ভবন, অফিস, স্কুল, হাসপাতাল, ব্যাংক ইত্যাদি জায়গায় ব্যবহৃত হয়। একে ডেকোরেটিভ মেঝে-ও বলে। সাদা অথবা রঙিন সিমেন্ট এবং বিভিন্ন রং- এর মার্বেল পাথরের ছোট দানা (৩ থেকে ৬ মিমি আকারের) ১:৩ অনুপাতে মিশিয়ে সিসি ফ্লোরের নিয়মে প্রস্তুতকৃত কংক্রিট বেইজের উপরে ৩৪ মিমি পুরু সিমেন্ট কংক্রিটের (১:২:৪) স্তর স্থাপন করে এর ৬ মিমি পুরু মার্বেল পাথরকুচির টপিং নির্মাণ করাকে টেরাজো ফ্লোরিং বলে।

টেরাজো ফ্লোরিং নির্মাণ পদ্ধতিঃ কংক্রিট বেইজের উপর টপিং বা ফ্লোরিং নির্মাণের পূর্বে সমস্ত জায়গাটিকে অ্যালুমিনিয়াম, ব্রাস বা কাচের সর পাত দ্বারা কতকগুলো ছোট ছোট প্যানেলে বিভিন্ন ডিজাইনে বিভক্ত করা হয়। একে সেপারেটরও বলে। সেপারেটর পাতের চওড়া ১.৫ থেকে ২ মিমি এবং উচ্চতা ফ্লোর এর চেয়ে সামান্য বেশি হবে। যাতে টেপিং তৈরি এবং ঘষার পরে একই সমতলে থাকতে পারে। কংক্রিট বেইজের উপরিভাগের ধুলাবালি পরিষ্কার করে পানি দ্বারা ভিজাতে হবে। ভিজাপৃষ্ঠে সিমেন্ট গ্রাউট প্রয়োগ করে। ১:২:৪ এ অনুপাতের মসলা দ্বারা অল্টারনেট প্যানেলগুলোর ঢালাই এর কাজ সমাধান করতে হবে। উপরিতল শক্ত হলে টেরাজো মিশ্রণ (পাথরকুচি, সিমেন্ট এবং পানি) বিছিয়ে সমতল করে দিতে হবে। রোলিং এবং টেম্পিং কার্য চলাকালীন সময়ে কিছু মার্বেল দানা ছড়িয়ে দেয়া যেতে পারে। যাতে মেঝের ৮০% জায়গাতে মার্বেল দানা দেখা যায়। পাট্টা ও কর্ণিক দ্বারা সমতল করে ১২ থেকে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত শুকাতে দেয়া হয়। শুকানোর পর ২-৩ দিন পর্যন্ত কিউরিং করা হয়। মেঝে ঢালাই এর ৭ দিন পর ঘষার কাজ আরম্ভ করতে হয়। যার জন্য সে কৃত্রিম পাথর ব্যবহার করা হয় তাকে কার্বোরান্ডাম বা ঘষা পাথর বলে। তিন প্রকার ঘষা পাথর পাওয়া যায়। যেমন-মোটা, মাঝারি এবং সরু দানার পাথর। প্রথমে মেঝেকে পানি দ্বারা ধুয়ে পানি সহযোগে মোটা দানার (৬০নং) পাথর দ্বারা ঘষতে হবে। কোথাও বেশি ঘষা হলে অথবা ছিদ্র অথবা গর্ত দেখা দিলে একই রংয়ের ঘন সিমেন্ট গ্রাউট প্রয়োগ করতে হবে। ৭ দিন পর একইভাবে মাঝারি দানা (১২০ নং) পাথর দ্বারা হতে হবে। এর ৪ থেকে ৬ দিন পর সরুপানা (৩২০নং) পাথর দ্বারা একইভাবে যথা হয়। সরু দানা পাথর যারা মেঝে ঘষা শেষ হলে মেঝেকে ভালভাবে পানি দ্বারা ধুয়ে ফেলতে হবে। প্রয়োজনবোধে সাবান পানির পাতলা দ্রবণ ব্যবহার করা যায়। তারপর অবরোলিক অ্যাসিডের পাতলা দ্রবণ (অ্যাসিড + দ্রবণ) মেঝেতে ছিটিয়ে দিয়ে কাঠের উসা দিয়ে মেঝে ঘষতে হবে। পরের দিন পরিষ্কার ও অল্প ভিজা ন্যাকড়া দিয়ে মুছে ফেলতে হবে। তারপর তিনভাগ তারপিন তৈল এবং এক ভাগ মোম মিলিয়ে গরম করে মসলা তৈরি করা হয় এবং ন্যাকড়া দ্বারা মেঝে ঘষে পরে মুছে নিতে হয়। প্রতি দশ বর্গমিটার মেঝের জন্য ১০ গ্রাম মোম এবং পেইন্ট তার্পিন তৈল ব্যবহার করতে হয়। এ মেঝে খুব নয়নাভিরাম ও মসৃণ হয় কিন্তু খরচ বেশি পড়ে।

মোজাইক মেঝে : সাধারণ পাথরের পরিবর্তে মার্বেল পাথরের স্লাব অথবা ছোট ছোট পাথরের টুকরা দ্বারা তৈরি টাইলযুক্ত কৃত্রিম পাথরের মেঝেকে মোজাইক ফ্লোর বলে। এ ধরনের মেঝে বিভিন্ন রং – এর এবং দেখতে সুন্দর ও ঝকঝকে হয়। খরচ ও টেরাজো মেঝের মতোই। এখানে মার্বেল কুচির টাইল আগেই তৈরি করা থাকে। সেগুলোই মেঝের উপর বসান হয়। এ মোজাইক টাইলের মাপ ২০*২০ সেমি. বা ২৫*২৫ সেমি. ।

 

মোজাইক মেঝ নির্মাণ পদ্ধতিঃ মোজাইক ফ্লোর নির্মাণের জন্য প্রথমে সাব-বেইজ তৈরি করা হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে সাব- বেইজ তৈরির জন্য প্রথমে ব্রিক ফ্লাট সোলিং করে এটির উপর ১ : ৩৮৬ অনুপাতের মসলা দ্বারা কংক্রিট ঢালাই করা হয়। এর পুরুত্ব ৪ থেকে ১০ সেমি হতে পারে। মোজাইক করার জন্য ৬ মিমি আকারের মার্বেল কুচি, রঙিন সিমেন্টের মসলা কংক্রিট বেইজের উপর বিছিয়ে তৈরিকৃত মোজাইক টাইলগুলো বসান হয়। অথবা কংক্রিট বেইজের উপর ৫-৮ সেমি পুরু লাইম- সুরকি মর্টার্ বিছিয়ে সমতল করা হয়। তারপর শুকানোর পূর্বেই ২ ভাগ চুন, ১ ভাগ পাউডার মার্বেল এবং ভাগ পাজোলানা পদার্থ দ্বারা তৈরিকৃত মসলা ৩ মিমি পুরুত্বে বিছাতে হবে। প্রায় ৪ ঘণ্টা পরে মোজাইক টাইল একটু আঘাত করে এর উপর বসান হয়। টাইলগুলো ফ্যাক্টরি থেকে কাটাই করে পাঠান হয়। ফলে মোজাইক ফ্লোর খুব তাড়াতাড়ি করা যায়। টাইল বসানোর ৩/৪ দিন পর থেকে পিউমিক স্টোন দ্বারা ঘষা কাজ আরম্ভ করতে হয়। এর ঘষার কাজ টেরাজো ফ্লোর এর মতো।

 টাইল ফ্লোরিং: টাইল পূর্ব ঢালাইকৃত কংক্রিট বা টেরাজো এর হতে পারে অথবা কুমোরের তৈরি মাটির হতে পারে। প্রিকাস্ট বা পূর্ব ঢালাইকৃত টেরাজো টাইলকে মোজাইক টাইল বলে। এ টাইল বসানোর পর পালিশ করা হয়। হোয়াইট গেø­ইজড টাইল কুমোরেরা মাটি দ্বারা তৈরি করে। যা মেঝে, ওয়াটার ক্লোসেট, বাথরুম, সুইমিংপুল এবং অন্যান্য স্যানিটারি বøক রূপে ব্যবহার করা হয়। ক্লে নির্মিত টাইল বিভিন্ন পুরুত্বে এবং বিভিন্ন আকারে তৈরি করা হয়। আবাসিক গৃহ, অফিস, স্কুল , হাসপাতাল এবং অন্যান্য পাবলিক বিল্ডিং- এ দ্রæত মেঝে নির্মাণ করতে টেরাজো মেঝের পরিবর্তে টাইল মেঝে তৈরি করা হয়।

উচিংলা মারমা
ইন্সট্রাক্টর
ডিপার্টমেন্ট অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং
ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট।

Tags: No tags

Comments are closed.