ফ্রেন্ডশিপ সেন্ট্রার , গাইবান্ধা-01-01

ফ্রেন্ডশিপ সেন্ট্রার , গাইবান্ধা – পার্ট অফ মর্ডান আর্কিটেকচার অফ বাংলাদেশ

আধুনিক স্থাপত্য কলা বা Modern Architecture এর অংশ হিসেবে 32 হাজার বর্গফুট আয়তনের এক বিশাল এরিয়া তে নির্মিত হয়েছে ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার। বাংলাদেশের গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের মদনের পাড়া গ্রামের এক অদ্ভুত সুন্দর ভবন ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার। ভবনের ছাদ আর ভূপৃষ্ঠ সমান্তরালে তাই ভবনটির পাশ দিয়ে হঠাৎ হেটে গেলেও চোখে পড়বে না।

মাটির নিচে অত্যাধুনিক এই ভবন টি আর এর ছাদ ঘাস  দিয়ে ঢাকা। ভবনের ছাদের সবুজ ঘাস যেন মিশে গেছে চারপাশের প্রকৃতির সাথে। এমন অসাধারণ ভবনটির নকশাকার স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী। মাটির নিচে নির্মিত এ ভবন উপর থেকে দেখতে অনেকটা প্রাচীন বৌদ্ধ বিহারের মত।এর নির্মাণশৈলীর অনুপ্রেরণাও প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার মহাস্থানগড় থেকে পাওয়া । দূর থেকে ভবনটি সহজে চোখে পড়ে না ।

ভবনের জন্য নির্ধারিত জমি খুবই নিচু হওয়ায় পানি আটকাতে চারদিকে বাঁধ দেয়া হয়েছে।স্বল্প বাজেটের কারণে মাটি ভরাট করে নির্মাণের চিন্তাটা বাদ পড়েছিল শুরুতেই।এই কারণে ভবন নির্মাণ হয়েছে সাশ্রয়ী। এই ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে স্থানীয় লাল রঙ এর ইট ও সিমেন্টের গাঁথুনি এবং এতে কোনো প্লাস্টার ব্যবহার হয়নি। ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার নির্মাণে প্রায় দুই বছর সময় লেগেছে এবং ভবনটি নির্মাণের খরচ হয়েছে আনুমানিক আট কোটি টাকা। এই প্রজেক্ট এর ডিজাইনের কাজ ২০০৮ সালে শুরু হলেও নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০১১ সালে।

পুরো সেন্টারে  দুই টি ব্লক রয়েছে । “ক” ব্লকে মূলত অফিস, ট্রেনিং সেন্টার, লাইব্রেরী আর অন্যদিকে “খ” ব্লক আবাসন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। রুমের অবস্থান ও কার্যক্রম অনুসারে পু্রো নির্মাণ এলাকা 24 ভাগে ভাগ করা হয়েছে যেমন লাইব্রেরী, এডমিন রুম, পার্কিং ,রিসেপশন ইত্যাদি। এদের একটির সঙ্গে আরেকটি সংযুক্ত বারান্দা ও খোলা প্যাভেলিয়ন দিয়ে।

যেহেতু এটি একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তাই প্রশিক্ষণার্থীদের সুবিধার্থে শান্ত পরিবেশ বজায় রাখার উদ্দেশ্যেই এই ভবনটি নির্মিত হয়। পর্যাপ্ত আলো আর  বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এতে। ভবনের ছাদে সবুজ ঘাসে ঢাকা ও কক্ষগুলো মাটির নিচে থাকায় প্রাকৃতিক ভাবে অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা থাকে। যেসব ঘর একেবারে অন্ধকার সেখানে প্রাকৃতিক আলোর উৎস স্কাইলাইট রয়েছে, ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা ও প্রাকৃতিক। প্রতিটি ব্লকের উচ্চতা সমান।পুরো বিল্ডিং এর লাইট কোর্ট আর  উন্মুক্ত চাতাল আলোছায়ার দারুন সমাহার তৈরি করে।ভবন এলাকায় ৫টি ওয়াটার পুল আছে ।ছাদে যাতে পানি জমে না থাকে সে জন্য পুরো ছাদে  চমৎকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা রয়েছে। এসব ড্রেনই  প্রকৃতির সঙ্গে মিশে দৃষ্টির আড়ালে রয়েছে।স্থানীয়ভাবে তৈরী ইটের গাথুনির দিয়ে নির্মিত ভবনটিতে প্রতিদিনই কৌতুহলী মানুষের ভীড় জমে।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের পুরস্কারের জন্য বিশ্বের 384 স্থাপনাকে পেছনে ফেলে  চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়ার 19 টি  স্থাপত্যের মধ্যে ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার ও ছিল । বাংলাদেশের এই স্থাপনাটি 2014 থেকে 2016 সালের শ্রেষ্ঠ স্থাপনা হিসেবে সম্মানজনক আগা খান আওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়।

সবুজ আর শান্তভাবে প্রকৃতির মাঝে বেঁচে মিশে থাকায় এই ভবনটি হয়েছে আধুনিক স্থাপত্য কলা বা Modern Architecture এর এক অসাধারণ নিদর্শন ।

লেখক

লিমা আক্তার 

জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর

আর্কিটেকচার এন্ড ইন্টেরিয়র ডিজাইন টেকনোলজি

ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট

Tags: No tags

Comments are closed.